ঢাকা,শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

লামায় মদ পাচারকালে ২ নারী আটক

বিদেশ ডেস্ক :
ভারতের বিতর্কিত ধর্মীয় নেতা ও টিভি ব্যক্তিত্ব জাকির নায়েককে আশ্রয় দিয়েছে মালয়েশিয়া। সম্প্রতি তাকে দেশটির প্রশাসনিক রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদ, হাসপাতাল ও রেস্তোরাঁতে দেখা গেছে। দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী সংসদে জাকির নায়েককে বসবাসের অনুমতি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাকির নায়েকের সঙ্গে বৈঠকের ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, গত মাসে দীর্ঘদিন পর মালয়েশিয়ায় প্রকাশ্যে আসেন জাকির নায়েক। দেশটির পুত্রজায়া মসজিদে দেহরক্ষীসহ প্রকাশ্যে এসেছিলেন। এই মসজিদেই দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই নামাজ পড়তে আসেন। এ সময় রয়টার্সের এক নারী সাংবাদিক ভারতে তার বিরুদ্ধে চলমান তদন্ত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। জবাবে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে নারীদের সঙ্গে কথা বলা ঠিক নয়।
পরে রয়টার্সের পক্ষ থেকে মন্তব্য জানতে চাইলেও কোনও জবাব দেননি জাকির নায়েক।
মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ হামিদি মঙ্গলবার দেশটির সংসদে বলেছেন, জাকির নায়েককে পাঁচ বছর আগে স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। পক্ষপাতমূলকভাবে তাকে এই অনুমতি দেওয়া হয়নি।
জাহিদ হামিদি বলেন, এই দেশে বসবাসের সময় তিনি কোনও আইন ও নিয়ম ভঙ্গ করেননি। ফলে তাকে গ্রেফতার বা আটকের কোনও আইনি ভিত্তি নেই।
উপপ্রধানমন্ত্রী জানান, জাকির নায়েককে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ভারতের কাছ থেকে কোনও অনুরোধ পায়নি মালয়েশিয়া।
জাহিদ হামিদি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ফেসবুকে জাকির নায়েকের সঙ্গে বৈঠকের ছবি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, মালয়েশিয়ার কয়েকজন মানবাধিকারকর্মী দেশটির হাইকোর্টে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাদের অভিযোগ তিনি সেখানে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছেন। তারা জানান, পুত্রজায়া মসজিদে জাকির নায়েকের উপস্থিতির কথা তাদের জানা ছিল না। এমনকি জাকির নায়েক যে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন তাও তারা জানতেন না।
মসজিদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কয়েক মাস থেকে পুত্রজায়াতে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করছেন জাকির নায়েক।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, মালয়েলিয়ার আরও কয়েকটি মসজিদ, হাসপাতাল ও রেস্তোরাঁতেও সম্প্রতি তাকে দেখা গেছে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পরেই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় উসকানির অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, হামলায় যুক্ত দুই জঙ্গি জাকিরের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। বিষয়টি সামনে আসার পরই জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা।
২৬ অক্টোবর ১৫১ জন সাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে এবং ইন্ডিয়ান পেনাল কোড ও আনল’ফুল অ্যাকটিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারায় জাকির নায়েক এবং তার মালিকানাধীন নিষিদ্ধ ঘোষিত প্রতিষ্ঠান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) এবং হারমোনি মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে এনআইএ।
জঙ্গি কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত এবং তাদের অর্থ দেওয়া ও অর্থ পাচারের অভিযোগে গত বছরের ১৮ নভেম্বর জাকির নায়েকের ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনকে (আইআরএফ) পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। আনলফুল অ্যাক্টিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট এর আওতায় জাকিরের এনজিওকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পরেই জাকির নায়েক বিদেশে চলে যান।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশটির এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সামনে হাজির হওয়ায় জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট (পিএমএলএ) আইনে জাকিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন মুম্বাইয়ের এনআইএ’র বিশেষ আদালত। চলতি বছরের জুলাই মাসে জাকির নায়েকের আন্তর্জাতিক পাসপোর্টটিও বাতিল করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে এনআইএ’র তরফে তাকে একাধিকবার সমন পাঠানো সত্ত্বেও তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সামনে হাজির না হওয়ার কারণে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে জাকির নায়েকের পিস টিভির সম্প্রচারও বন্ধ করা হয়। সূত্র: রয়টার্স, হিন্দু।

পাঠকের মতামত: